যদি আপনার টাইপ ২ ডায়াবেটিস থাকে, তাহলে আপনি কী খাচ্ছেন এবং কতটা খাচ্ছেন তার উপর ভিত্তি করে আপনার রক্তে শর্করার প্রতিক্রিয়া ভিন্ন হতে পারে। এখানে সার্ভিং সাইজ, পরিমাণ এবং কীভাবে সেগুলি আপনাকে প্রভাবিত করে তার একটি সংক্ষিপ্ত ধারণা দেওয়া হলো।
সার্ভিং সাইজ বনাম পরিমাণ
পরিমাণ এবং সার্ভিং সাইজ দুটোই আপনি কতটুকু খাবেন তা নির্দেশ করে, তবে এগুলো একই জিনিস নয়।
পরিমাণ হল আপনি একবারে কতটা খাবার খাচ্ছেন, যেমন এক মুঠো বাদাম, এক গ্লাস দুধ, বা একটি ব্লুবেরি মাফিন। এটি সম্পূর্ণ আপনার পছন্দ। তবে, যেহেতু পরিমাণ সঠিকভাবে মাপা হয় না, তাই এতে থাকা ক্যালোরি, কার্বোহাইড্রেট বা ফাইবার কতটুকু তা জানা একটু কঠিন হতে পারে।
অন্যদিকে, সার্ভিং সাইজ হল একটি নির্দিষ্ট, মাপা খাবারের পরিমাণ, যেমন এক কাপ সিরিয়াল বা এক পিস ব্রেড। এটি একটি নির্দিষ্ট মাপ, তাই আপনি সহজেই ক্যালোরি বা পুষ্টি উপাদান কতটুকু খাচ্ছেন তা জানতে পারেন।
ফুড লেবেলে সার্ভিং সাইজ উল্লেখ থাকে, যা আপনি কী খাচ্ছেন তা ট্র্যাক করতে সাহায্য করে। তবে মনে রাখবেন, দোকানে কেনা ব্লুবেরি মাফিন হয়তো দুই সার্ভিং হতে পারে। তাই পুরো মাফিন খেলে লেবেলে উল্লেখ করা ক্যালোরি ও কার্বোহাইড্রেটের পরিমাণ দ্বিগুণ হবে।
রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণ করা
টাইপ ২ ডায়াবেটিস ব্যবস্থাপনা মানে হল কতটুকু কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন এবং ফাইবার খাচ্ছেন তা নজর রাখা।
ফাইবার রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। ২০২০ সালের একটি গবেষণায় দেখা গেছে, যারা ডায়াবেটিসে বেশি ফাইবার খেয়েছেন, তাদের স্বাস্থ্য ভালো ছিল।
প্রোটিন রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণে এবং দীর্ঘ সময়ের জন্য পেট ভরা রাখতে সাহায্য করে। যদি আপনার ওজন কমানোর প্রয়োজন থাকে, তাহলে প্রোটিন যুক্ত করা বিশেষভাবে উপকারী হতে পারে।
টাইপ ২ ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য পরিমাণ নিয়ন্ত্রণের টিপস
কতটুকু খাচ্ছেন তা সম্পর্কে সচেতন হওয়া রক্তে শর্করা বাড়তে না দেওয়ার জন্য সহায়ক হতে পারে। এখানে কিছু সহজ কৌশল দেওয়া হলো:
১. কার্বোহাইড্রেট গুনুন
কার্বোহাইড্রেট খাওয়ার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করা গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে সাদা রুটি, মিষ্টি পেস্ট্রি এবং চিনিযুক্ত পানীয়ের মতো পরিশোধিত কার্বোহাইড্রেট কমানোর চেষ্টা করুন। আপনার ডাক্তার আপনাকে প্রতিদিন এবং প্রতিটি খাবারের সময় কতটুকু কার্বোহাইড্রেট খাওয়া উচিত তা বলবেন।
CDC প্রতিদিনের খাবার যেমন রুটি, ডাল, ফল এবং সবজির কার্বোহাইড্রেট গুনার একটি তালিকা দেয়, যা আপনাকে সাহায্য করতে পারে।
২. প্লেট পদ্ধতি ব্যবহার করুন
আপনার প্লেট সঠিক পরিমাণে খাবার খাওয়ার জন্য একটি ভিজ্যুয়াল গাইড হতে পারে। প্লেটের অর্ধেক অংশ নন-স্টার্চি সবজি যেমন পালং শাক, ব্রোকলি বা ঝিঙে দিয়ে পূর্ণ করুন। বাকিটা ভাগ করে নিন লিন প্রোটিন (যেমন মুরগি বা টোফু) এবং শস্য বা স্টার্চ দিয়ে (যেমন আলু বা ব্রাউন রাইস)। আপনি চাইলে স্টার্চ বাদ দিয়ে আরও বেশি সবজি নিতে পারেন।
পাশে ছোট একটি ফল যেমন একটি ছোট নাশপাতি যোগ করতে পারেন এবং কম ক্যালোরি ও কার্বোহাইড্রেটযুক্ত পানীয় যেমন পানি বা চিনি ছাড়া চা পান করতে পারেন।
৩. হাত দিয়ে মাপুন
আপনার হাত ব্যবহার করে দ্রুত এবং সহজে পরিমাণ অনুমান করতে পারেন:
- আপনার মুঠি = প্রায় এক কাপ (বা মাঝারি আকারের একটি ফল)।
- আপনার তালু (আঙুল বাদ দিয়ে) = প্রায় ৩ আউন্স মাংস, পোল্ট্রি, বা মাছ।
- আপনার বুড়ো আঙুল = প্রায় ১ আউন্স পনির বা মাংস।
- একটি মুঠো = প্রায় ১ থেকে ২ আউন্স বাদাম বা চিপস।
- আপনার বুড়ো আঙুলের ডগা = প্রায় ১ টেবিল চামচ (যেমন মাখন বা অ্যাভোকাডো), এবং আপনার তর্জনী আঙুলের ডগা = ১ চা চামচ।
যদিও এটি মাপার কাপ বা স্কেলের মতো সঠিক নয়, তবে আপনার হাত ব্যবহার করে আপনি পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করতে এবং রক্তে শর্করার স্তর ঠিক রাখতে পারেন।
মূল কথা
সঠিক পরিমাণে খাওয়া টাইপ ২ ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে বড় ভূমিকা রাখতে পারে। কার্ব গোনা, প্লেট পদ্ধতি এবং হাত ব্যবহার করে পরিমাণ মাপার মতো কৌশলগুলি আপনার কার্বোহাইড্রেট এবং ক্যালোরি নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করতে পারে, যা আপনার রক্তে শর্করা এবং ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখে।
আপনার ডাক্তার আপনাকে কোন খাবার গ্রুপ থেকে কতটা খেতে হবে সে সম্পর্কে ব্যক্তিগত নির্দেশনা দিতে পারেন। সেগুলি অনুসরণ করে, সুষম খাদ্য গ্রহণ করে, এবং সক্রিয় থেকে আপনি ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করতে, ওজন কমাতে (যদি প্রয়োজন হয়), এবং সামগ্রিক স্বাস্থ্য বজায় রাখতে পারবেন।
Comments